প্রযুক্তির প্রসারের ফলে প্রতিদিনই পরিবর্তন হচ্ছে আমাদের জীবনযাত্রার চিত্র। বদলে যাচ্ছে জীবনযাপন, লেনদেন, যোগাযোগ, পেশা এবং বিনোদনের মাধ্যম। আগামী পাঁচ বছর পর আমাদের জীবনে কী পরিবর্তন আসছে তা আমরা এখন হয়তো অনুমানও করতে পারব না। তাই প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীর যে কোনো পরিবর্তনের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকা চাই। এখন আমাদের পড়াশোনা আর জানা শুধু পাঠ্যবইয়ে সীমাবদ্ধ নেই, জানার পরিধিকে বিস্তৃত করতে আমাদের তথ্য নিতে হয় ইন্টারনেট এবং অন্যান্য মাধ্যম থেকে। যে কারণে কার্যকরভাবে যথাযথ তথ্য আদান প্রদান করতে পারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা।
আমরা এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যথার্থতা যাচাই করে আমাদের বিদ্যালয়ের একটি বুলেটিন তৈরি করব। এছাড়া নিজেদের জন্য তৈরি করব একটি অনলাইন পোর্টফলিও। যে পোর্টফলিওতে পুরো বছর জুড়ে ডিজিটাল প্রযুক্তিসহ সকল বিষয়ে আমরা যা যা কাজ বা প্রজেক্ট করব সেগুলোর নিয়মিত আপলোড দিতে থাকব। এক বছর পর কী কী গবেষণা করলাম, প্রজেক্ট করলাম তা যে কেউ পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে দেখে জানতে পারবে।
চলো তবে শুরু হয়ে যাক আমাদের স্কুল বুলেটিন তৈরির যাত্রা।
ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে আমরা খুব সহজে যে কোনো তথ্য এক মুহূর্তেই অনুসন্ধান করে বের করে ফেলি। আবার এই ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু মানুষ ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে আমাদের বিভ্রান্ত করছে। আমরা আমাদের যে স্কুল বুলেটিন তৈরি করব সেখানে আমরা সবাই কমপক্ষে একটি করে প্রচারিত ভুল তথ্যের বিপরীতে সঠিক তথ্য খুঁজে বের করব এবং সে সম্পর্কে একটি করে নিবন্ধ বা আর্টিকেল লিখব।
কাজটি করতে হলে আমাদের আগে বুঝতে হবে কীভাবে ভুল তথ্য প্রচারিত হতে পারে। নিচের ঘটনাগুলো পড়ে আমরা খুঁজে বের করব, কীভাবে ভুল তথ্য প্রচারিত হয়ে থাকে।
সাগর পড়াশোনা শেষ করে কয়েকটি ব্যাংকে চাকরির আবেদন করেছে। চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য সে প্রস্তুতি নিচ্ছে। একদিন সে বাসে বসে চাকরির সাক্ষাৎকার বিষয়ক একটি বই পড়ছিল। এই সময় তার পাশের সিটে বসা একজন লোক তাকে চাকরির বই পড়তে দেখে আলাপ করতে করতে জানাল, সে লোকটির বড় ভাই একটি বড় ব্যাংকে কাজ করে। কিছু টাকা দিলে সে তার ভাইয়ের কাছে সাগরের চাকরির ব্যাপারে বলবে। সাগর রাজি হয়ে টাকার ব্যবস্থা করল। এক সপ্তাহের মধ্যে লোকটি সাগরকে ডেকে একটি চিঠি দিলো। সাগর চিঠি খুলে দেখল এটি তার নামে ওই ব্যাংক থেকে নিয়োগপত্র অর্থাৎ সাগরের চাকরি হয়ে গেছে। লোকটি সাগরকে একটি পত্রিকার ওয়েবসাইটও দেখাল যেখানে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অ্যাপ্লিকেশন নাম্বার দেওয়া আছে, সাগর তার অ্যাপ্লিকেশন নাম্বারও দেখতে পেল। সাগর খুশি হয়ে লোকটিকে আরও কিছু টাকা দিলো। চিঠিতে উল্লেখিত দিনে সাগর ওই ব্যাংকে উপস্থিত হয়ে জানল তার হাতে থাকা নিয়োগপত্রটি আসলে নকল। |
পরের সেশনে এর সম্ভাব্য উত্তর দেওয়া আছে, আমরা মিলিয়ে নিতে পারি।
জ্যোতি নবম শ্রেণীতে পড়ে। একদিন বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরলে জ্যোতির মা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে নবম-দশম শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীকে ল্যাপটপ দেওয়া হবে। ইউটিউবে একটি সংবাদে তিনি দেখেছেন। ওই সংবাদে কীভাবে ল্যাপটপের জন্য আবেদন করতে হবে সেটিও বলেছে। সংবাদটি দেখল, বুঝতে পারল বাংলাদেশের স্বনামধন্য একটি টেলিভিশনের সংবাদ। জ্যোতির মনে কোনো সন্দেহ থাকল না, সে সকল ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে আবেদন ফর্ম পূরণ করে ইমেইল করল। একদিন পর এক ব্যক্তি জ্যোতির মাকে ফোন করল এবং জানাল ল্যাপটপ পাঠাতে কুরিয়ার খরচ হিসেবে কিছু টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠালে তারা ল্যাপটপ পাঠিয়ে দিবে। জ্যোতি মায়ের ফোন থেকে টাকা পাঠিয়ে দিল। কিন্তু এরপর থেকে সে ওই মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পেল এবং জ্যোতি বুঝতে পারল সে প্রতারণার শিকার হয়েছে। |
পলাশের বাবা তার সোশ্যাল মিডিয়ার মেসেজে একটি ছবি পেলেন যেটি তারই এক বন্ধু তাকে পাঠিয়েছেন। ছবিটি আসলে দেশের স্বনামধন্য একটি পত্রিকার ছবি। পত্রিকার লোগো এবং কার্ড দেখে বোঝা যাচ্ছে এটি আজই ওই পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। ছবির সংবাদটি একটি পাঠ্যবইয়ের ছবি নিয়ে। সংবাদে লেখা আছে পাঠ্যবইতে অপ্রাসঙ্গিক ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। পাঠ্যবইয়ের পৃষ্ঠাটির ছবি সংবাদটিতে দেওয়া আছে। পলাশ নবম শ্রেণিতে পড়ে, স্বাভাবিকভাবেই পলাশের বাবার সংবাদটি পেয়ে মেজাজ খারাপ হল। তিনি তার সোশ্যাল মিডিয়ার একাউন্ট থেকে ঐ সংবাদটি শেয়ার করলেন। তার একাউন্ট থেকে তার পরিচিত আরও অনেকেই এটি শেয়ার করলেন। এক সপ্তাহ পর পলাশের বিদ্যালয়ের অভিভাবক সভায় পলাশের বাবা ব্যাপারটি নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে আলোচনা করার প্রস্তাব জানালেন। প্রধান শিক্ষক জানালেন খবরটি আসলে মিথ্যা এবং বিকৃত করা সংবাদ। |
উল্লেখিত তিনটি পরিস্থিতিতে, সাগর, জ্যোতি ও জ্যোতির মা ও পলাশের বাবা কী করতে পারতেন বলে আমি মনে করি?
উপরের তিনটি পরিস্থিতিতে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে কীভাবে কোনো তথ্য বিকৃত হয় তা আমরা নিজেরাই খুঁজে বের করলাম।
বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, যারা এরকম ছড়িয়ে পড়া ভুল তথ্যগুলোকে বিশ্লেষণ করে সঠিক তথ্য খুঁজে বের করতে সাহায্য করে।
সার্চ ইঞ্জিনে (Google, Bing, yahoo) 'Fact Check Bangladesh' এই KeyWord গুলো দিয়ে সার্চ করলে আমরা কিছু ওয়েবসাইটের নাম পাব যেগুলো ভুল তথ্যকে চেক করে বা যাচাই করে দেয়। |
আমরা যে কোনো একটি-দুইটি ওয়েবসাইট থেকে যাচাই করা কয়েকটি সংবাদ পড়ব, এবং শ্রেণিকক্ষের সবাই মিলে একে একে উত্তর দিব, কীভাবে ওই সংবাদটিকে বিকৃত করা হয়েছে।
আগামী সেশনের প্রস্তুতি: বাড়িতে ইন্টারনেট সুবিধা থাকলে আমরা বাড়িতে এই ওয়েবসাইটগুলো থেকে আরও কিছু সংবাদ দেখব এবং লিখে রাখব আর কী কী উপায়ে কোনো সংবাদ বা তথ্যকে বিকৃত করা যায়। উপায়গুলোর একটি তালিকা তৈরি করবো। ইন্টারনেট সুবিধা না থাকলেও আমরা আমাদের চারপাশ থেকে বিভিন্ন ঘটনা বা তথ্য পর্যবেক্ষন করে খুঁজে বের করবো কি উপায়ে কোনও সংবাদ বা তথ্যকে বিকৃত করা যায় এবং এগুলোর একটি তালিকা তৈরি করবো।
আজকে আমরা নতুন আরেকটি বিষয় সম্পর্কে বোঝার চেষ্টা করব এবং তা হলো বাস্তবতা ও মিডিয়ার (গণযোগাযোগ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম) চোখে বাস্তবতা। গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন তথ্য এবং বিনোদনের উপাদান নিয়ে থাকি। এই তথ্য এবং বিনোদন আমাদের মনে নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রতি একটি মনোভাব বা Perception তৈরি করে। আর এই মনোভাবটি বাস্তবতার সাথে বা প্রকৃত সত্যের সাথে কিছুটা আলাদাও হতে পারে। এই বিষয়টি নিয়েও আমরা আমাদের স্কুল বুলেটিনে একটি প্রতিবেদন বা প্রবন্ধ লিখতে পারি।
আজকের মূল বিষয়ে যাওয়ার আগে গত সেশনের বিষয়টি নিয়ে আরেকবার আলোচনা করা যাক। আমরা বাড়ি থেকে একটি তালিকা তৈরি করে এনেছি। আমরা একটি নতুন পদ্ধতিতে বাড়ির কাজটি সমন্বয় করব। তা হলো 'ভয়েস কমান্ড' অর্থাৎ আমরা মুখে আমাদের তালিকা থেকে আনা একটি একটি পয়েন্ট বলব আর কম্পিউটারে তা লেখা হয়ে যাবে। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো এই কাজটি কীভাবে করতে হয় জানি। যারা জানি তারা অন্যদের সাহায্য করব। আর না জানলেও অসুবিধা নেই। নিচের নির্দেশনাবলি অনুসরণ করে আমরা সহজে কাজটি করতে পারব।
এই কাজটি করতে ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন হবে।
১। গুগল ড্রাইভ থেকে একটি 'Docs' ফাইল খুলব।
২। ফাইলের Fonts-এ ক্লিক করে More Fonts অপশন সিলেক্ট করব।
৩। নতুন একটি পপ আপ ইউন্ডো আসবে। এখানে 'Scripts: all scripts'-এ ক্লিক করে 'Bengali' সিলেক্ট করব। (চিত্র - ১.৩)
৪। 'OK' ক্লিক করলে আরেকটি নতুন পপ আপ উইন্ডোতে যতগুলো বাংলা ফন্ট আছে সবগুলো আসবে, এই সবগুলোকে ক্লিক করে সিলেক্ট করে নিব। (চিত্র-১.৪)
৫। এবার আবার আমাদের Docs-এর Font-এর অপশনে গিয়ে যে বাংলা ফন্ট গুলো আমরা সিলেক্ট করে আসলাম সেগুলো দেখতে পাব। তার যে কোনো একটি ফন্ট আমরা সিলেক্ট করে নিব।
৬। ফন্ট সিলেক্ট হয়ে গেলে Ctrl + Shift + S
এই তিনটি বাটন একসাথে ক্লিক করলে ভয়েস কমান্ড চালু হয়ে যাবে এবং স্ক্রিনে একটি মাইক্রোফোনের ছবি আসবে। মাইক্রোফোনের উপর আবার আমাদের ফন্ট সিলেক্ট করার অপশান থাকবে। আমরা 'বাংলা' সিলেক্ট করে নিব।
৭। এরপর মাইক্রোফোনটিতে ক্লিক করলে আমাদের ভয়েস রেকর্ড হবে এবং সাথে সাথে তা আমার তৈরি করা Docs ফাইলে লেখা হয়ে যাবে।
এই নির্দেশনাটি বুঝতে যদি কঠিন হয় তাহলে 'Voice Type Bangla Writing' এই কয়টি 'key Word' দিয়ে ইন্টারনেটে সার্চ দিলে আমরা এই পুরো প্রক্রিয়া বর্ণনা করে কয়েকটি ভিডিও আছে, যা দেখেও আমরা সহজে কাজটি করতে পারব।
আমরা একজন একজন করে ল্যাপটপের সামনে এসে আমাদের বাড়িতে তৈরি তালিকা থেকে একটি একটি করে পয়েন্ট বলব আর একটি ডকুমেন্ট তৈরি হবে। এই ডকুমেন্টটি আমাদের স্কুল বুলেটিন তৈরির সময় কাজে লাগবে।
এই প্রক্রিয়াটি আমাদের অন্যান্য বিষয় যেমন-বাংলা, বিজ্ঞান, ধর্ম ইত্যাদি বিষয়ের কাজ করার সময় অনুসরণ করতে পারব, এতে আমাদের কাজ সহজ হয়ে যাবে।
বিদ্যালয়ে কম্পিউটার না থাকলে আমরা বোর্ডেও তালিকা তৈরির কাজটি করতে পারি।
এবার আমরা আজকের মূল আলোচনায় আসি। আমরা জানি টেলিভিশন, সংবাদপত্র, রেডিও এগুলোকে 'গণযোগাযোগ মাধ্যম' বলে, আর ইউটিউব, ফেইসবুক, ইন্সটাগ্রাম এগুলোকে 'সামাজিক যোগাযোগ' মাধ্যম বলে। আর ইন্টারনেট ব্যবহার করে যে কোনো যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে 'নিউ মিডিয়া'।
দর্শক বা টার্গেট গ্রুপ (লক্ষ্য দল)-এর কাছে খুব দ্রুত পৌঁছানোর জন্য অধিকাংশ গণযোগাযোগ মাধ্যমের একটি 'নিউ মিডিয়া' সংস্করণ বা ভার্সন থাকে। আমরা কি এই ধরনের কিছু উদাহরণ দিতে পারি?
গণযোগাযোগ মাধ্যম | নিউ মিডিয়া সংস্করণ |
১। বাংলাদেশ টেলিভিশন | বাংলাদেশ টেলিভিশনের ওয়েবসাইট থেকে 'লাইভ' |
২। বিবিসি (টেলিভিশন) | বিবিসি ইউটিউব চ্যানেল, ফেইসবুক পেইজ, টুইটার একাউন্ট |
৩। |
|
81 |
|
ঘটনা ১ : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কিছু ব্যক্তিগত একাউন্ট থেকে বেশ কিছু ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে রাজশাহীতে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে এবং কিছু জায়গা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এমন অনেক ভিডিও দেখার পর আমাদের মনে হবে পুরো রাজশাহী জেলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এখন কোনো সংবাদ মাধ্যমে যদি বৃষ্টির ওই তথ্যটি প্রচার করে তাহলে সেখানে রাজশাহীর কোন উপজেলার কোনও কোনও গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে নির্দিষ্ট করে বলবে। এতে করে ঐ তথ্য সম্পর্কে আমাদের মনোভাব স্পষ্ট বা যথার্থ হবে। আর শুধু বিচ্ছিন্ন কিছু ভিডিও দেখলে আমাদের মধ্যে ভুল ধারণাটিই থেকে যাবে। |
অর্থাৎ আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে বারবার যে তথ্যটি দেখি সেটিকেই প্রকৃত সত্য বলে মনে করি। অনেক সময় এটি নাও হতে পারে।
এছাড়া বর্তমানে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার কারনে, আমরা ইন্টারনেটে একবার যেটি দেখি বা অনুসন্ধান করি আমার সামনে বারবার ওই একই বিষয়ে একই ধরনের কনটেন্ট বা তথ্য আসতে থাকে। এতে করে আমার মনে হতে পারে, এটিই আসলে ঘটছে বা এটিই প্রকৃত সত্য।
আজ থেকে আগামী দুই সপ্তাহ আমরা একটি নোটবই বা জার্নাল লিখব। আমরা প্রতিদিন কমপক্ষে দুইটি করে সংবাদ পড়ব, দেখব অথবা শুনব। নোটবই বা জার্নালে এটির রেকর্ড রাখব। নোটবই এ রেকর্ড যেভাবে রাখতে পারি- |
তারিখ: সংবাদ মাধ্যমের নাম: সংবাদের শিরোনাম: সংবাদের বিষয়: আমার মতামত: |
আমরা সংবাদপত্র, টেলিভিশন, ইন্টারনেট, রেডিও যে কোনো জায়গা থেকে এই সংবাদ নিতে পারি। সংবাদের বিষয় এবং আমার মতামত দুই লাইনের বেশি হবে না। 'আমার মতামত' অংশে এই সংবাদটি 'প্রকৃত সত্য' 'মিডিয়ার তৈরি সত্য' নাকি 'মিথ্যা' এই বিষয়ে আমার মতামত বা সিদ্ধান্ত লিখব।
আগামী সেশনে ডায়েরি বা জার্নালটি বিদ্যালয়ে নিয়ে এসে শিক্ষককে দেখাব।
আগামী সেশনে আমরা শ্রেণিকক্ষে একটি দলীয় বিতর্কের আয়োজন করব। বিতর্কের পক্ষ ও বিপক্ষ দল শিক্ষক আগামী সেশনে লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করবেন।
বিতর্কের বিষয় হতে পারে:
১। 'একমাত্র গণমাধ্যমই পারে প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে' বা
২। 'সত্য যাচাই করা এবং প্রচার করার দায়িত্ব একমাত্র সাংবাদিকের'
আজকের সেশনে আমরা একটি দলীয় বিতর্কে অংশ নিব। আমরা বুলেটিন তৈরি করার জন্য যে প্রতিবেদন বা প্রবন্ধ লিখব সেখানে যথেষ্ট প্রমাণ ও যুক্তি উত্থাপনের প্রয়োজন হবে। তাই এই বিতর্ক বা যুক্তি-তর্কের খেলা আমাদের যুক্তি দিয়ে চিন্তা করতে সাহায্য করবে।
আমরা কি আমাদের ডায়েরি বা জার্নালটি নিয়ে এসেছি? নিয়ে এসে থাকলে শিক্ষককে দেখাই।
যুক্তি-তর্ক শুরু করার আগে 'নিরপেক্ষতা' নিয়ে কিছুটা আলোচনা করা যেতে পারে। যে কোনো তথ্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা সবচেয়ে বেশি জরুরি। নিরপেক্ষতা বলতে কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে কোনো পক্ষপাত দৃষ্টিভঙ্গি না রেখে, আবেগের উপর নির্ভর না করে বস্তুনিষ্ঠভাবে বিচার করা বা সিদ্ধান্ত নেওয়াকে বোঝায়।
বিভিন্ন কারণে আমাদের মধ্যে পক্ষপাতিত্ব কাজ করতে পারে।
মনে করি আমি আমার একজন দূরসম্পর্কের মামাকে খুব পছন্দ করি। কারণ তিনি আমাকে সব সময় পড়াশোনা এবং খেলাধুলা করতে উৎসাহ দিতেন, বিভিন্ন সময় উপহার দিতেন, মজার মজার গল্প শোনাতেন। আমি ভাবতাম ইনি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষদের একজন। সে মামার ছেলে আবির একদিন আমাকে এসে বলল, তার বাবা তাকে পড়াশোনা নিয়ে অনেক চাপ দিচ্ছেন, অযথা অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন কোচিংয়ে পাঠাচ্ছেন। আবিরের কথা আমার বিশ্বাস হলো না। এই বিশ্বাস না হওয়ার কারণে হচ্ছে আমার 'পূর্ব অভিজ্ঞতা'। এই পূর্ব পভিজ্ঞতার কারনে ঐ মামার প্রতি আমার পক্ষপাতিত্ব কাজ করছে। |
আমি ছোট বেলা থেকে একজন চলচ্চিত্র নির্মাতার কাজ অনেক পছন্দ করি। তার তৈরি সব চলচ্চিত্র প্রায় আমার দেখা হয়ে গেছে। একদিন জানতে পারলাম ওই নির্মাতা আসলে নিজে কিছু তৈরি করেননি বরং বিভিন্ন বিদেশি চলচিত্রের গল্প অনুকরণ করে চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন। আমি এই তথ্যটি কিছুতেই বিশ্বাস করলাম না। আমার এই বিশ্বাস না করাটার কারন হচ্ছে আমার 'আবেগ'। এরকম জাতীয়তা, সংস্কৃতি, সম্পর্ক ইত্যাদি কারনে আমাদের মধ্যে আবেগগত পক্ষপাতিত্ব কাজ করে। |
এখানে মনে রাখা জরুরি, পক্ষপাতিত্ব সবসময় মন্দ নয়। আমার নিজের কাছে যখন মনে হবে আমি পক্ষপাতিত্ব করছি তখন আমার উচিৎ হবে আমার মতের বিরুদ্ধ যুক্তিটির পক্ষে যথেষ্ট প্রমান আছে কিনা তা ভেবে দেখা। প্রমান যদি থাকে তাহলে আমাদের ঐ প্রমানের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
কোন একজন ব্যক্তি যখন পেশা হিসেবে সাংবাদিক বা তথ্যপ্রদানকারি তখন তাকে নিরপেক্ষভাবে তথ্য উপস্থাপন করতে হয়। সেখানে তিনি তার আবেগ কিংবা পূর্ব অভিজ্ঞতাকে ভুলে বস্তুনিষ্ঠ তথ্যই আমাদের দিয়ে থাকেন।
তবে, অনেক ক্ষেত্রে সংবাদ মাধ্যমের উপর এর মালিকানার প্রভাবের কারনে সংবাদ অনেক সময় পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে যায়
মনে করি একজন সংবাদ পত্রের মালিকের চিনির ব্যাবসা আছে। একদিন ওই মালিকের চিনিকলের শ্রমিকরা অনেক দিন বেতন না পেয়ে আন্দোলন শুরু করেছে। প্রকৃতপক্ষে, সময়মত বেতন না দেওয়া ঐ মালিকেরই অপরাধ। এখন ঐ মালিক যদি তার সংবাদ পত্রের সকল সাংবাদিককে বলে দেয় যেন মালিকের পক্ষে সংবাদ প্রচার করে বা কোন রকম সংবাদ করতে বিরত থাকে, তাহলে দেশবাসী কিন্তু প্রকৃত সংবাদ পাবেনা। |
আর কী কী কারণে একটি তথ্য বা সংবাদ প্রভাবিত হতে পারে বলে আমি মনে করি তা নিচের ঘরে লিখি-
আগামী সেশনের প্রস্তুতি:
এখন আমাদের যুক্তি-তর্কের খেলা শুরু হবে। শিক্ষক আমাদের শ্রেণিকক্ষকে দুইটি দলে ভাগ করে 'পক্ষ দল' ও 'বিপক্ষ দল' নির্বাচন করে দিবেন।
খেলার নিয়ম হচ্ছে, পক্ষ দলের একজন বিষয়ের পক্ষে ১ মিনিট করে বলবে, এরপর বিপক্ষ দলের একজন ১ মিনিট বলবে। এভাবে খেলাটি ১৫ মিনিট চলবে। একজন শিক্ষার্থী একবারের বেশি বলার সুযোগ পাবে না। তবে কারো মনে কোনো যুক্তি এলে সে তার দলের অন্য একজনকে চিরকুটে লিখে দিয়ে সাহায্য করতে পারবে। বিষয়:
১। 'একমাত্র গণমাধ্যমই পারে প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে' বা
২। 'সত্য যাচাই করা এবং প্রচার করার দায়িত্ব একমাত্র সাংবাদিকের'
আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন মাধ্যম থেকে তথ্য নিচ্ছি এবং এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে দৈনন্দিন সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। ছোট পরিসরে উদাহরণ দিলে বলা যায়, বিদ্যালয়ের বাৎসরিক ছুটির তালিকা বা শিক্ষাপঞ্জি থেকে গ্রীষ্মের ছুটির সময় জেনে আমি পরিবারের সদস্যদের সাথে কবে বেড়াতে যেতে পারি তার সিদ্ধান্ত নিই বা ভিডিও সম্পাদনা (এডিটিং) করার জন্য কোন সফটওয়্যার বিনামূল্যে পাওয়া যায় এবং বড় ফাইল নিয়ে কাজ করা যায় সে তথ্য নিয়ে আমি সে সফটওয়্যার আমার কম্পিউটারে ইনস্টল করি। এভাবে নানারূপে তথ্যের উপর আমরা নির্ভর করি। কিন্তু সকল তথ্য আবার সংবাদ না। সংবাদের কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকে। আমরা এই বৈশিষ্ট্য জানব এবং আজকের সেশনে সিদ্ধান্ত নিব আমরা আমাদের বিদ্যালয় বুলেটিনে কোনও বিষয় নিয়ে একটি প্রতিবেদন বা আর্টিকেল লিখব।
সময়োপযোগিতা: ঘটে যাওয়া ঘটনার তথ্য যত কম সময়ে পাঠক বা সংবাদগ্রহীতার কাছে যাবে ততই এটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ হিসেবে বিবেচিত হবে। কোনো ঘটনা ঘটার অনেক সময় পর ঘটনার তথ্যটি আর সংবাদ থাকে না। যেমন- ১লা জুন বাংলাদেশের ফুটবল দলের কোনো ম্যাচ জয়ের তথ্য ১০ জুন পর্যন্ত আর গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ হিসেবে বিবেচিত হবে না। |
নৈকট্য: কোনো একটি নিজস্ব পরিমন্ডলের তথ্য সম্পর্কিত মানুষদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবাদ হিসেবে বিবেচ্য। আমার বিদ্যালয় উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে এটি আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবক বা আমার উপজেলার মানুষের কাছে সংবাদ কিন্তু আরেকটি বিভাগের উপজেলার মানুষের কাছে এটি প্রয়োজনীয় বা অকৃষ্ট হওয়ার মতো তথ্য নয়, তাই তাদের কাছে এটি সংবাদও নয়। |
প্রভাব: কোনো তথ্য যদি নিজস্ব পরিমণ্ডলের মধ্যে না হয় কিন্তু ঐ তথ্য অসংখ্য মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলে তখন সংবাদ হয়ে উঠে। প্রভাব অনেক রকম হতে পারে, যেমন- অর্থনৈতিকভাবে লাভবান বা ক্ষতিগ্রস্ত, আবেগের সাথে সম্পর্কিত বা কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের সাথে সম্পর্কিত। |
ভারসাম্যতা: কোনো ঘটনায় যদি একাধিক বা তার বেশি পক্ষ সম্পর্কিত থাকে তবে ঐ ঘটনার উপর তৈরি সংবাদে সকল পক্ষের মতামত বা তথ্য থাকতে হবে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং বৈধতা নিয়ে কেউ অভিযোগ করে তবে শুধু সেই অভিযোগ নিয়েই একটি তথ্য প্রকাশ করলে সেটি একটি মানসম্মত সংবাদ বলে বিবেচিত হবে না। অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত কর্তৃপক্ষ দুই পক্ষেরই মতামত নিয়ে সংবাদটি প্রকাশ বা পরিবেশন করতে হবে। |
আমরা জেনে রাখলাম, যখন আমরা কোনো সংবাদ পরিবেশন করব তখন কোন কোন বিষয় আমাদের বিবেচনা করতে হবে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তির কোনো কাজ, জীবনযাপন বা বক্তৃতাও আকর্ষণীয় সংবাদ হয়ে উঠতে পারে। খেলোয়াড়, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচ্য।
সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে আরও একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন, তা হলো ৬ক। একটি সংবাদে কী, কে, কোথায়, কখন, কীভাবে, কেন এই ছয়টি প্রশ্নের উত্তর থাকলে সংবাদটি পরিপূর্ণতা পায়। এছাড়া সংবাদ বা ঘটনাটির সাথে সম্পর্কিত উপাত্ত, ছবি, ভিডিও সংবাদের সাথে যুক্ত করলে এটি আরও বেশি বেশি গ্রহণযোগ্য ও আকর্ষণীয় হয়।
সংবাদের কাঠামোকে উল্টা পিরামিডের সাথে তুলনা করা হয়।
আমরা আজকে আমাদের আর্টিকেল বা নিবন্ধ লেখার বিষয়বস্তু ঠিক করব। বিষয়বস্তু ঠিক করার আগে একটি অনুশীলন করা যাক। নিচে একটি বিষয়বস্তু দেওয়া আছে, এই বিষয়বস্তুর সাথে সম্পর্কিত সংবাদ উপাদান কী হতে পারে তা নিজের মতো করে লিখি:
বিষয়: আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি
|
যে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চাই: শিক্ষার্থী অনুপস্থিতির কারণ
|
যে যে তথ্য থাকতে পারে:
|
যে উপাত্ত (ডেটা) থাকতে পারে:
|
যার যার সাক্ষাৎকার থাকতে পারে:
|
যে ধরনের ছবি বা ভিডিও ব্যবহার হতে পারে:
|
আমাদের অনুসন্ধানী বা গবেষণামূলক সংবাদ নিবন্ধ/আর্টিকেল/ব্লগ লেখার পরিকল্পনা:
এই অভিজ্ঞতা শেষে আমরা আমাদের বিদ্যালয়ের জন্য একটি অনলাইন পোর্টাল তৈরি করব। সে পোর্টালে থাকবে আমাদের তৈরি নিবন্ধ বা আর্টিকেল/ব্লগ। আমরা আমাদের আশপাশ থেকে আমাদের ব্লগের বিষয়বস্তু ঠিক করব। মনে রাখতে হবে এমন বিষয়বস্তু নির্বাচন করব যার জন্য আমাদের উপাত্তের প্রয়োজন হবে। কারণ আমরা আগামী কিছু সেশনে উপাত্ত এবং তার উপস্থাপন নিয়ে কাজ করব।
নিচে কিছু বিষয়বস্তুর উদাহরণ দেওয়া হলো এবং সাথে ওই বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত উপাত্তের ধারণাও দেওয়া হলো।
বিষয়বস্তু | সম্পর্কিত উপাত্তের (ডেটা) ধারণা |
আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতি | গত বছর অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কোন মাসে উপস্থিতির হার কেমন। কোন মাসে অনুপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। |
আমার এলাকায় বাল্য বিবাহ | বাল্য বিবাহের সবচেয়ে প্রচলিত ৫টি কারনের মধ্যে কোন কারনে বেশি বাল্যবিবাহ হয় তার তুলনামূলক হার |
আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ | কোন শ্রেণির এবং জেন্ডারের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলায় বেশি অংশগ্রহণ করে তার হার |
অনলাইনে ভুল তথ্য বা গুজব | কোন ৫টি কারনে/মাধ্যমে গুজব সবচেয়ে বেশি ছড়ায় এবং সেগুলোর হার |
অনলাইন প্রতারণা | সাধারণত মানুষ কী ধরনের অনলাইন প্রতারনার শিকার হন এবং হার |
ইন্টারনেটে শেখা | কত শতাংশ শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষক মনে করেন ইন্টারনেট ব্যবহার করে পড়াশোনা করা বা শেখা সম্ভব। |
উপরের উদাহরণগুলো শুধু আমাদের বোঝার সুবিধার্থে দেওয়া হয়েছে। আমরা উপরের বিষয়বস্তু থেকে আমাদের ডায়েরী কিংবা আমাদের আশপাশের যে কোনো বিষয়বস্তু থেকে যে কোনো একটি বিষয় নিব এবং এখন থেকে এর উপর কাজ শুরু করব। আমাদের বিষয়বস্তু ঠিক করে আগামী শ্রেণিতে শিক্ষককে দেখাব। শিক্ষক আমাদের সাহায্য করবেন যেন আমাদের সবার বিষয়বস্তু একইরকম না হয়ে যায়।
আমার নির্ধারিত বিষয়:
আমরা আমাদের বিদ্যালয় বুলেটিন তৈরি করার কাজের ধারণা পেয়ে গেছি। আমাদের নিবন্ধ বা আর্টিকেল লেখার ক্ষেত্রে আমাদের উপাত্ত বা ডেটা উপস্থাপন করতে হবে যেন আমাদের লেখাটি গ্রহণযোগ্য ও আকর্ষণীয় হয়। আমরা আমাদের নির্ধারিত বিষয়টি শিক্ষককে দেখাই, শিক্ষক আমাদের ঠিক করে দিবেন আমরা কে কোন বিষয় নিয়ে কাজ করতে চাই।
আমাদের আর্টিকেলে ডেটা যুক্ত করার জন্য আমরা একটি জরিপ করব। জরিপ হলো গবেষণার একটি পদ্ধতি। যে কোনো বিষয়ের উপর সে বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে তাদের মতামত সংগ্রহ করা হয় আর সে মতামতকে সমন্বিত করে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়। জরিপের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করা যায়-
১। বর্ণনামূলক প্রশ্ন
২। বহু নির্বাচিত প্রশ্ন
৩। লাইকার্ট স্কেল (মাত্রা নির্ধারণী প্রশ্ন)
আমরা যেহেতু উপাত্ত উপস্থাপন শিখব, আমাদের কাজের সুবিধার্থে আমরা শুধু নৈর্ব্যক্তিক ধরণের প্রশ্নপত্র তৈরি করব। আজকে আমরা কীভাবে স্প্রেডশিটে একটি ডেটা বিশ্লেষণ করা যায় এবং ভিজ্যুয়াল করা যায় তা অনুশীলন করব। এই মুহুর্তে আমরা যেহেতু জরিপ করিনি, আমাদের কাছে কোন ডেটা নেই। আমরা কাজের সুবিধার্থে এক্সেল (Excel) এ একটি ডেটা শিট তৈরি করে নিব।
মনে করি আমাদের বিষয় পড়াশোনার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারের কার্যকারিতা।
জরিপ প্রশ্ন ১ : উত্তরদাতার নাম
জরিপ প্রশ্ন ২ : আপনার বাসায় কি কম্পিউটার বা স্মার্ট ফোন আছে?
ক। আছে খ। নেই
জরিপ প্রশ্ন ৩ : 'ইন্টারনেট পড়ালেখায় সাহায্য করে'-এর সাথে আপনি-
ক। একমত খ। একমত নই
জরিপ প্রশ্ন ৪ : 'আমি আমার সন্তানকে পড়ালেখার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারে উৎসাহ দিই' এর সাথে আপনি-
ক। একমত খ। একমত নই
আমরা ১০ জন ব্যক্তির কাছ থেকে এই চারটি প্রশ্নের উত্তর নিয়ে স্প্রেডশিটে যুক্ত বা এন্ট্রি করার পর এরকম দেখাবে। পাশাপাশি কলামে (A, B, C, D...) প্রশ্নগুলো লিখব আর উপর নিচে রো (1,2,3,4..) এ আমরা চিত্র - ১.৯ প্রাপ্ত উত্তরগুলো লিখব বা এন্ট্রি দিব।
১০ জন ব্যক্তির উত্তর আমরা গুনেগুনেই এর অ্যানালাইসিস অর্থ্যাৎ কতজন ব্যক্তি কী উত্তর দিয়েছে এই হিসাব করে ফেলতে পারব। কিন্তু আমাকে যদি ১০০০ ব্যক্তির ডেটা দেওয়া হয় তাহলে আমার পক্ষে হিসাব করা অসম্ভব হয়ে যাবে। তাই স্প্রেডশিট ব্যবহার করে আমরা এই কাজটি শিখে নিলে মুহূর্তেই অনেক বড় বড় হিসেব বা গবেষণার কাজ করে ফেলতে পারব।
একই ধরনের উত্তর আছে এমন প্রশ্নকে আমরা একসাথে এনালাইসিস করতে পারব সহজে। তাহলে জরিপ প্রশ্ন ৩ এবং ৪ আমরা একটি এনালাইসিস করে দেখি। একই শিটে সবগুলো ডেটার নিচে এসে আমরা প্রশ্ন দুইটিকে আলাদা করি।
প্রশ্নগুলো পাশাপাশি কপি-পেস্ট করি এবং উত্তরের অপশন গুলো নিচে নিচে রোতে কপি পেস্ট করি (চিত্র -১.৯)
যেখানে আমি আমার ডেটার সমন্বয় বা হিসাব চাই সেই সেল-এ (C17) এভাবে ফর্মুলা লিখি- = COUNTIFS(
কার্সর উপরে নিয়ে যে কলামের ডেটা আমরা অ্যানালাইসিস করতে চাই সে কলামের ডেটার রেঞ্জ সিলেক্ট করি। একটি কমা (,) দিই। তারপর ওই কলাম থেকে আমি যা বের করতে চাই তার উপর কার্সর রেখে সিলেক্ট করি। এখানে 'একমত'-এর উপর কার্সর রাখা হয়েছে এবং ওই সেলের রেফারেন্স আমার ফর্মুলায় চলে এসেছে, এবার ব্রাকেট ক্লোজ করি {)}। Enter চাপলেই বের হয়ে আসবে আমার হিসাব।
এভাবে সবকটি ঘরে ফর্মুলা বসিয়ে আমরা হিসেব করে ফেলতে পারব। সবগুলো ঘরের হিসাব বের হয়ে গেলে আমরা এবার শতাংশ বের করব।
শতাংশ বের করার সহজ উপায় হচ্ছে,
যে ঘরে আমি শতাংশটির হিসাব রাখতে চাই সে ঘরে কার্সর রেখে (=) দিব, যার শতাংশ বের করতে চাই সে ঘরে কার্সর রেখে সিলেক্ট করব, (/) ভাগ চিহ্ন দিয়ে দুইটি অপশনের যোগফল (১০) এবং গুণ চিহ্ন (*)দিয়ে ১০০ বসাবো। Enter চাপলেই ফলাফল বের হয়ে আসবে।
এবার আমি আমার টেবিলের যেটুকু অংশকে ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশনে আনতে চাই অর্থাৎ গ্রাফে প্রকাশ করতে চাই সেটুকু অংশ সিলেক্ট করে, উপরের রিবনের 'Insert' ক্লিক করে 'Recommended Chart'-এ ক্লিক করে পছন্দমতো গ্রাফ সিলেক্ট করে নিব। (চিত্র-১.১২)
আমাদের গ্রাফ তৈরি হয়ে গেছে। এবার আমাদের গ্রাফটিকে ছবি আকারে কম্পিউটারে সেইভ করে নিব।
আমরা আগামী সেশনে আমাদের আর্টিকেল বা নিবন্ধের জন্য গ্রাফ তৈরি করব। আর গ্রাফের জন্য প্রয়োজন হবে ডেটা। আমরা আমাদের নির্ধারিত বিষয়ের উপর কমপক্ষে ৫টি জরিপ প্রশ্ন তৈরি করব। এবং সেই প্রশ্ন অনুযায়ী কমপক্ষে ১০ জনের মতামত নিব। প্রয়োজনে আমরা অনলাইন জরিপ ফর্মও ব্যবহার করতে পারি।
আমাদের আজকের সেশনের কাজ শুধু আমার নিয়ে আসা উপাত্তগুলোকে সমন্বয় করে একটি গ্রাফ তৈরি করা। শ্রেণিকক্ষের সবাই সবাইকে সহযোগিতার মাধ্যমে গ্রাফগুলো তৈরি করে নিব। প্রয়োজনে শ্রেণি সময়ের পর শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে কাজটি করতে পারব।
আমরা কিন্তু ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশনের কাজ প্রেজেন্টেশন সফটওয়্যারেও তৈরি করতে পারি। মেন্যুবারের insert বাটন থেকে 'Chart' অপশনে গেলে খুঁজে পাব। তবে এক্ষেত্রে আমার ডেটা আগে থেকে তৈরি থাকতে হবে।
আমাদের বিদ্যালয় বুলেটিন তৈরি হবে আমাদেরই লেখার সমন্বয়ে, তাই আমাদের লেখার উপর যেন আমাদের অধিকার বজায় থাকে সেটিও আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া আমাদের নিবন্ধ লিখতে গেলে কিছু ছবি, উদ্ধৃতি, বা গ্রাফিক্স ইত্যাদি প্রয়োজন হতে পারে। তাই কপিরাইট বিষয়ে আমাদের আগে থেকেই সচেতন থাকা প্রয়োজন। সৃষ্টিশীল এবং মৌলিক কোনো কাজের উপর এর স্বত্বাধিকারের অধিকার হচ্ছে কপিরাইট। অর্থাৎ কপিরাইটে রেজিস্ট্রেশন করা আছে এমন সৃষ্টিশীল কাজ স্বত্বাধিকারীর অনুমতি ছাড়া যদি অন্য কেউ ব্যবহার, পুনর্মুদ্রণ, অনুবাদ, প্রকাশ ইত্যাদি করে তবে স্বত্বাধিকারী ঐ ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। কপিরাইট আইনের আওতায় শাস্তি ও জরিমানা হতে পারে।
সাহিত্য, শিল্পকর্ম, সংগীত, চলচ্চিত্র, ভাস্কর্য, কম্পিউটার প্রোগ্রাম, নকশা, স্থাপত্য, আলোকচিত্র অর্থাৎ মৌলিকভাবে তৈরিকৃত সবকিছুই কপিরাইটের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
মৌলিক সৃষ্টিশীল কাজের ন্যায্য ব্যবহার বা ফেয়ার ইউজ কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সৃষ্টিশীল কাজগুলো ব্যবহার, প্রকাশ, উপস্থাপন করা সম্ভব হয়। বিশদভাবে ক্ষেত্রগুলো হলো-
তবে এক্ষেত্রেও লক্ষ রাখতে হয় নতুন করে তৈরি করা কাজটি যেন মূল কাজের ছোটো অংশ হয়। অর্থাৎ নতুন কাজটিই যেন পূর্ণাঙ্গ ধারণা দিতে সমর্থ হয়।
কিছু ছবি, গান, ভিডিও ইত্যাদি মৌলিক সৃষ্টিশীল কাজ হলেও সেগুলো সবার ব্যবহারের জন্য উপযোগী। 'ক্রিয়েটিভ কমনস' একটি অলাভজনক প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ যা এ সৃষ্টিশীল কাজগুলোকে বৈধ উপায়ে সবার ব্যবহারের উপযোগী করে দেয়।
আমরা আজকে শ্রেণিকক্ষেই বৈধ উপায়ে আমাদের নিবন্ধ বা আর্টিকেলের জন্য কোনো ছবির প্রয়োজন হলে তা শিক্ষকের সহায়তায় সবাই মিলে ডাউনলোড করে নিব। গুগল সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে আমরা কাজটি করতে পারি।
এক্ষেত্রেও ছবির সাথে যদি ছবির ফটোগ্রাফার বা ওয়েবসাইটের নাম থাকে, ছবি ব্যবহার করার সময় 'সোর্স' হিসেবে ফটোগ্রাফার বা ওয়েবসাইটের নাম উল্লেখ করতে হবে।
আমাদের নিবন্ধ/আর্টিকেল/ব্লগটি লিখতে আর একটি সেশন পাব। তাই আমাদের লেখা প্রকাশ উপযোগী করে তৈরি করার কাজটি দ্রুত শেষ করতে হবে। মনে রাখতে হবে আমাদের লেখায় কমপক্ষে একটি গ্রাফ বা চার্ট ব্যবহার করতে হবে। |
আমরা আমাদের বিদ্যালয় বুলেটিন তৈরি করার একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। তথ্যের যথার্থতা বিবেচনা করে সংবাদের বৈশিষ্ট্য ও কাঠামো বিবেচনা করে নিবন্ধ লেখার কাজ নিশ্চয়ই অনেক দূর এগিয়েছে। আজ আমরা নিজেদের বিদ্যালয় বুলেটিন প্ল্যাটফর্মটি তৈরি করব। আগামী সেশনে আমাদের লেখাগুলো আপলোড বা যুক্ত করব। আমরা একই সাথে নিজেদেরও একটি অনলাইন পোর্টফোলিও তৈরি করতে পারি। আমরা সারা বছরজুড়ে ডিজিটাল প্রযুক্তি ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ের যে প্রজেক্টগুলো করব সবগুলো নিজেদের পোর্টফোলিওতে আপলোড দিতে পারব। আমরা বিদ্যালয় পর্যায় শেষ করে যখন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা পেশায় যুক্ত হতে যাব তখন যে কেউ আমার পোর্টফোলিও দেখে আমার দক্ষতাগুলো যাচাই করতে পারবে।
নিজস্ব ওয়েবসাইট বা পোর্টফোলিও তৈরি করার জন্য অনেকগুলো বিনামূল্যে সেবা রয়েছে, তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
১। Wordpress.com
২। Carbonmade
৩। Google site
8। Wix.com
৫। Behance
আমরা বহুল পরিচিত গুগল সাইট ব্যবহার করে প্রথমে বিদ্যালয়ের বুলেটিন সাইট, তারপর নিজের জন্য একটি অনলাইন পোর্টফোলিও সাইট তৈরি করব।
আমরা একটি খালি পেইজ নিয়ে নিজেরা নিজেদের বিদ্যালয়ের ছবি এবং অন্যান্য তথ্য দিয়ে নিজেদের বিদ্যালয় বুলেটিন গুছিয়ে রাখব। শিক্ষক তার ই-মেইল অ্যাড্রেস ব্যবহার করে আমাদের সাইটটি তৈরি করতে সহায়তা করবেন।
আমরা আমাদের সাইটটি আজকে গুছিয়ে রাখব। আগামী দিন নিজেদের সব লেখা আপলোড বা যুক্ত করে তারপর সাইটিটি পাবলিশ বা প্রকাশ করব। চাইলে আমাদের সাইটটি পাবলিশ করার জন্য আমাদের প্রধান শিক্ষক বা অন্যান্য সম্মানিত ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানাতে পারি।
আমরা আমাদের লেখা নিবন্ধ বা আর্টিকেল চূড়ান্ত করার পূর্বে শিক্ষককে একবার দেখিয়ে নিব, শিক্ষকের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা আমাদের আর্টিকেলটিতে ছবি, ভিডিও, সাক্ষাৎকার নানা কিছু যোগ করতে পারি।
আর গ্রাফ তো যুক্ত হবেই।
আমরা নিজেরা নিজেদের অভিনন্দন জানাতে পারি। নবম শ্রেণির শুরু থেকেই একটু একটু করে কাজ করে আজকে আমরা নিজেদের একটি বুলেটিন প্রকাশ করতে যাচ্ছি। আমরা আমাদের কাজগুলো সেশন সময়ে বসে আপলোড দিব। আপলোড দেওয়া শেষ হলে শ্রেণি সময়ের মধ্যে বা পরে অতিথিদের উপস্থিতিতে নিজেদের বুলেটিন পাবলিশ করব। আমাদের এই বুলেটিনটি তৃতীয় অভিজ্ঞতায় যখন আমাদের বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট বানাব সেই ওয়েবসাইটের সাথে যুক্ত করে দিব।
আজ বাড়ি ফিরে আমাদের আর্টিকেলটি আমাদের অভিভাবকে দেখাতে পারি। আমাদের বুলেটিনের ওয়েব ঠিকানা অভিভাবকদের পাঠিয়ে দিলে তারা দেখে নিবেন এবং নিচে মতামত দিবেন। ইন্টারনেট সুবিধা না থাকলে আমরা কাগজে লিখেও অভিভাবককে দেখাতে পারি।
আত্মমূল্যায়ন: আমরা বাড়িতে গিয়ে আরেকটি কাজ করব, তা হল আত্মমূল্যায়ন। নিচের তিনটি ঘরে নিজের মতামত লিখি। এই মতামতগুলো পরিবর্তীতে আমাদের মূলায়নের অংশ হবে।
আরও দেখুন...